1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

বার্লিনের পথে প্রান্তরে – ১

  • Update Time : রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৩৮৩ Time View

প্রত্যয় প্রবাস ডেস্ক, ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রী জ্যাক ল্যাং বলেছিলেন, প্যারিস সব সময়ই প্যারিস কিন্তু বার্লিন কখনোই বার্লিন না। এ কথা বলার কারন বার্লিনের রুপ একেক সময় একেক রকম। সকালের বার্লিন আর রাতের বার্লিন কিংবা গ্রীস্মের বার্লিন এবং শীতের বার্লিনের রুপ আলাদা। জর্মন মূলুকে আছি প্রায় দুই বছর কিন্তু রাজধানী বার্লিন সেভাবে ঘোরা হয়নি। বার্লিন একই সাথে রাজধানী এবং একটি প্রদেশ (সিটি স্টেট)। জার্মানিতে এই সিটি স্টেট আছে মোট তিনটা ১. বার্লিন, ২. হামর্বুগ, ৩. ব্রেমেন। আগস্টের শেষ সপ্তাহ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষ। আমার শিক্ষকও ব্যস্ত পরীক্ষার খাতা দেখা নিয়ে তাই গবেষণা সহকারীর কাজেও তেমন তাড়া নেই। ব্লাবলা বাসে টিকেট কেটে চেপে বসলাম সকাল সকাল। বাস কয়েক মিনিটের মধ্যেই শহর পেরিয়ে বিখ্যাত জার্মান অটোবান দিয়ে পৌছলো।

জার্মানিতে বিশ্বরোডকে বলে অটোবান৷ এই অটোবানের বিশেষত্ব হল এখানে গতির কোন সীমারেখা নেই। যত জোরে ইচ্ছা চালাতে পারবেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশ তো বটেই আমেরিকা, কানাডা থেকে অনেক মানুষ জার্মানি আসে শুধুমাত্র অটোবানে গাড়ি চালাতে। বিশাল চওড়া আর মোজাইক করা মেঝের মত মসৃণ রাস্তা। আমাদের এনা পরিবহনের মামারা এই রাস্তা পেলে বিমানের সাথে পাল্লা দিতো৷ তবে আমাদের বাস ড্রাইভার ১১০/১২০ কিঃমিঃ এর বেশি জোরে চালালো না। রাস্তার দুই পাশে মাঝে মাঝে ভুট্টার ক্ষেত, ছোট ছোট গ্রাম, ফাঁকা মাঠ অথবা উইন্ড মিল। এগুলো দেখতে দেখতে বার্লিনের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিমালে পৌঁছে গেলাম দুপুর নাগাদ।

বিশাল শহর বার্লিন। ইউরোপে লন্ডনের পরে সবচেয়ে বড় শহর বার্লিন। আর গুরুত্বের দিক দিয়ে বার্লিন এখন লন্ডনকেও ছাপিয়ে গেছে। প্যারিস, রোম বা লন্ডনের মত জমকালো না হলেও বার্লিনের ইতিহাসও বেশ বর্ণিল। আর গত শতাব্দীর হিসাব ধরলে বার্লিনের মত ঘটনাবহুল শহর পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। বার্লিনের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১২শ শতাব্দীতে বানিজ্য পথ হিসেবে। ১৪১৭ সালে বার্লিন পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের প্রদেশ, ব্রান্ডেনবুর্গের রাজধানী হয়। এরপর বার্লিন বিভিন্ন সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল।

বার্লিনে নেমেই মন ভাল হয়ে গেল। ২১ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রা, সাথে রোদ আর মিস্টি বাতাস। এবার গন্তব্য বার্লিন মিইটে। ট্রেগেল এয়ারপোর্টের দিকে জায়গাটা। সেখানেই বন্ধুর বাসা, ওর আরো আগেই পৌছে যাবার কথা। কিন্তু ট্রেনের রাস্তায় কাজ চলায় আরো ১৫/২০ মিনিট দেরি হবে। শাস্ত্রে আছে অপেক্ষা করা নিমের পাচনের অপেক্ষা তিক্ত তবে আমার খুব একটা খারাপ লাগছিলো না। রাস্তার পাশ দিয়ে হাটা-হাটি করলাম একটু। চমৎকার প্রশস্ত রাস্তা। বার্লিনের যোগাযোগ ব্যবস্থা দারুন। পাতাল ট্রেন (উবান), মেট্রো (এসবান), বাস, ট্রাম সব রকমের ব্যবস্থাই আছে (গতি অনুসারে বলা। সবচেয়ে দ্রুতগামি উবান আর সবচেয়ে আস্তে চলে ট্রাম)। সাথে আছে সাইকেল চলার পথ। উবানে করে চলে গেলাম বাসায়। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আশপাশ দেখতে বের হলাম। আমি খুবই স্থির ভ্রমনকারী। কোন জায়গা গেলে সময় নিয়ে আস্তে আস্তে দেখি, অনুভব করার চেস্টা করি শহরের ভাষাটা। যে এলাকায় আছি এটা সম্ভবত পূর্ব জার্মানির অংশ ছিল। স্থাপনাগুলোতে তার ছাপ স্পর্ট। সব ভবনগুলো একই রকমের। অনেকটা লিথুনিয়ার রাজধানী ভিলনুসের মত। (পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানি নিয়ে একটু পর আলোচনা করছি এখন এলাকায় ফিরে যাই)। একটু পরেই শরনার্থীদের এলাকা। মানে এখানে শরনার্থীদের পূর্ণ-বাসন করা হয়েছে। জার্মানরা বাড়াবাড়ি রকমের চুপচাপ, জার্মান আবাসিক এলাকাগুলো ভয়াবহ রকমের শান্ত। একবার ক্লাসে আমাদের এক অধ্যাপক প্রশ্ন করেছিলো, জার্মানিতে এসে কি ভিন্নতা লক্ষ্য করছো? আমি উত্তর বলেছিলাম, আমাদের দেশের কবরস্থানের চেয়েও জার্মান আবাসিক এলাকাগুলো বেশি নিরব। আমার দেখায়, মদ না খাওয়া পর্যন্ত জার্মানরা হাসে না বা শব্দ করে কথা বলে না। তাই শরনার্থীদের এলাকায় বেশ ভাল লাগলো; রাস্তার পাশে বাচ্চাদের খেলাধুলো, হৈ-হুল্লোড় বা কান্নাকাটির শব্দ জার্মান এলাকায় পাবেন না!

শরনার্থীদের গ্রহন করার জন্য অনেকেই জার্মানদের মহান মনে করে। অবশ্যই মহানুভবতা আছে। তারা সাগরে ভাসমান মানুষদের জন্য ত্রানকর্তা হিসেবে অভিভূত হয়েছে। তবে মূল কারন, এই লাখ দশেক শরনার্থী নেবার পরও এখনো জার্মানিতে লোকের সংকট। ২০২১ সালে জার্মানিতে যত মানুষ অবসরে যাবে, সেই পদগুলো পূরন করার মত মানুষ জার্মানিতে নেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে জার্মানি বিপুল সংখ্যক তুর্কি এনেছিলো কারন তাদের কাজের জন্য মানুষ দরকার ছিল। এখন আরব শরনার্থী গ্রহন করেছে, সেই একই কারনে।

রাস্তা, পার্ক, লেক দেখতে দেখতে দারুন ভাবে কেটে গেল সময়। আশেপাশের এলাকা দেখতেই আমার অবস্থা, সখি বেলা যে পরে এল, জলকে চল। কিন্তু এখনই ফেরা যাচ্ছে না, রাতের আহার গ্রহন করতে হবে। জার্মানিতে প্রচুর তুর্কি খাবারের দোকান। এরমধ্যে বিশেষ করে বার্লিনে সবচেয়ে বিখ্যাত ডোনার কাবাব। আমার এক জার্মান বান্ধবী বলেছিলো, Berlin did not invent doner but Berlin made it best! ঢুকে গেলাম একটা ডোনারের রেস্তরায়। সেঁক দেওয়া পাউরুটির মধ্যে ভেড়ার ঝলসানো মাংস, ৫/৬ রকমের সস, আর সালাদ। চমৎকার একটা গন্ধ বের হচ্ছিলো ডোনার থেকে। এক কামড় দিতেই, মনে হল দুনিয়াটা কত সুন্দর!!

সন্ধ্যার পর থেকেই তাপমাত্রা নিচে নামা শুরু করেছে। সাথে গরম কাপরও নেই। অগত্যা রণে ভঙ্গ দিলাম। ফেরার জন্য উবানে চেপে বসলাম। উবান মূলত জমিনের নিচ দিয়েই চলে তবে তবে মাঝে মাঝে জমিনের উপরেও উঠে। তীর বেগে উবান চলছে গন্তব্য পানে আমার বাইরে মন নেই। আগামীকাল কোথায় কোথায় সেই চিন্তা মাথার বাম হেমোসফেয়ারের মগজে গিজগিজ করছে।

মূল অভিযান আগামীকাল!

সকালে উঠে খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়ে পরলাম। গন্তব্য জার্মানির সংসদ ভবন, ডয়েচার বুন্দেসতাগ। বার্লিন মিটে এলাকায় বুন্দেসতাগ অবস্থিত। পূর্বে এই ভবনের নাম ছিল রাইসস্তাগ। রোমান গঠন শৈলীর গথিক ভবন, খুব বিশাল না আবার ছোটও না। স্থাপনাগুনে গথিক ভবনগুলোর একটা আলাদা মোহনীয় ক্ষমতা থাকে, এই প্রসাদতুল্য ভবনও তার বাইরে না। এর সামনে একটা জার্মান পতাকা পত পত করে উড়ছে। একটা সমীহভাব আপনা-আপনিই চলে আসে। বিল্ডিংয়ের সামনে একটা মাঠ যেখানে অনেক জার্মান পরিবার এসেছে সময় কাটাতে। আজ চমৎকার রোদ, বাচ্চারা মাঠে খেলছে। সবুজ ঘাসের চাদরের উপর বসলাম। এই ভবনে বসেই ৮০ বছর আগে হিটলার বিশ্ব শাসন করেছে! ঠিক ওই খানে দাঁড়িয়েই হিটলার বহুবার ভাষন দিয়েছে!! ভাবতেই রোমাঞ্চিত হয়ে গেলাম…

আধুনিক রাষ্ট্র জার্মানি কখনো এক ছিল না। বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ১৮৭১ সালে জার্মানির জাতির পিতা অটো ফন বিসমার্কের নেতৃত্বে জার্মানি একত্রিত হয়। এরপরে জার্মানির একত্রিকরনের স্মারক হিসেবে বুন্দেসতাগ নির্মান করা হয়। জার্মানিতে দ্রুত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জার্মানি ইউরোপে আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা চালালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ১৯১৮ সালে যুদ্ধে জার্মানির অপমানজনক পরাজয় ঘটলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এর প্রতিক্রিয়া উগ্র জাতীয়তাবাদী নাৎসি পার্টির আবির্ভাব ঘটে। নাৎসি পার্টি ১৯৩০-এর দশকে অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে।

হিটলারের উত্থানের মাধ্যমে বার্লিন প্রথমবারের মত বিশ্বের মোড়লে পরিণত হয়। তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে অজেয় জার্মান বাহীনিকে রুখে দেয় প্রকৃতি। রাশিয়া অভিযানে গিয়ে হঠাৎ গ্রীস্মকালে শুরু হওয়া তুষারপাতে পর্যদুস্ত হয় হিটলারের বাহিনী। পাশার দান উল্টে যায়।

সোভিয়েত বাহিনী বার্লিন ছাতু বানিয়ে দেয়। ১৯৪৫ সালে বিজয়ের পর মিত্রশক্তি জার্মানিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে: ব্রিটিশ, ফরাসি, মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা একেকটি অঞ্চলের দায়িত্বে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা শক্তিগুলির মধ্যকার সংসার এর কয়েক বছর পরে ভেঙ্গে গেলে ১৯৪৯ সালে সোভিয়েত অঞ্চলটি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র তথা পূর্ব জার্মানিতে পরিণত হয়। পশ্চিম-নিয়ন্ত্রিত বাকী তিন অঞ্চল একত্রিত হয়ে পশ্চিম জার্মানি গঠন করে। যদিও বার্লিন পূর্ব জার্মানির অনেক অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল, তা সত্ত্বেও এটিকেও দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।

পূর্ব জার্মানির হাজার হাজার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ পশ্চিম জার্মানিতে পালিয়ে যাওয়া শুরু করলে ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মানি সরকার বার্লিনের সীমানায় একটি দেয়াল তুলে দেয়। এই দেয়ালই সেই বিখ্যাত বার্লিন প্রাচীর (Berlin Wall). ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সাথে সাথে বার্লিন প্রাচীরও ভেঙ্গে ফেলা হয়। তবে বার্লিন প্রচীরের স্মৃতি নিয়ে এখনো দাড়িয়ে আছে বার্লিন গেট এবং পূর্ব বার্লিন গ্যালারি। আমার পরের গন্তব্য বার্লিন গেট…

বার্লিন গেট পরিচিত ব্রান্ডেনবার্গ টর নামে। ২য় ফ্রেডেরিক উইলিয়াম ১৭৮৮ সালে এই গেট তৈরি করে করেন। গেটের উপরে একটা ভাস্কর্য নাম Quadriga, একজন দেবি বিজয়ের বেশে ঘোড়ার গাড়িতে করে যাচ্ছেন। তবে এর মূল কৃতিত্ব দুই জার্মানি একত্রিত হবার পরে। হাজার হাজার মানুষ বার্লিন গেটের নিচে এসে জরো হয় জার্মানির মিলন উৎসব করতে। এখনো বার্লিনের সব উৎসব হয় এই গেটকে কেন্দ্র করে। হাজার হাজার মানুষ আসে এই গেটকে দেখতে। গেটের পাশেই দেখা মিললো ঘোড়ার গাড়ি এবং রিকশার। এই রিকশাগুলো অনেকটা আমাদের দেশের রিকশার মতই। এগুলোতে করে বার্লিন ঘুরতে পারবেন চাইলেই তবে তার জন্য গুনতে হবে বেশকিছু ইউরো। প্রচুর মানুষের ভীর গেটের সামনে। সবাই ছবি তুলছে, আমিও আর বাদ যাবো কেন!?

বার্লিন গেট দেখেই লাফ দিয়ে পাশ দিয়ে যাওয়া ট্রামে চরে বসলাম। বার্লিন দেখতে দেখতে ট্রাম নিয়ে গেল পূর্ব বার্লিন গ্যালারিতে। গ্যালারি দেখে জার্মানদের প্রতি আরেক দফা শ্রদ্ধা আসলো। বার্লিন দেয়াল পুরোটা না ভেঙ্গে একটা অংশ রেখে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চিত্র শিল্পীদের এনে সেই বলেছে এই দেয়ালই ক্যানভাস! আঁকুন! তারা আকঁলো আর একটা মামুলি সীমান্ত দেয়াল হয়ে গেল ইউরোপের অন্যতম আকর্ষনীয় ভ্রমনস্থান। দারুণ সব চিত্রকর্ম দেখতে দেখতে বেলা পরে গেল, মতিস্ক জানান দিচ্ছে অনেকক্ষন ধরে অভুক্ত। খেতে হবে। এবারের গন্তব্য বার্লিনের অন্যতম জনপ্রিয় তুর্কি মুরগির মাংসের রেস্তোরাঁ, রিসা…

লেখক:মীর সালমান শামিল,জার্মান।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..